নেত্রী যেভাবে ভালো মনে করবেন সেভাবেই হবে- আবদুল হাই
নেত্রী যেখানে দিবে সেখানেই কাজ করবো- এড. দিপু
জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও তা পালন করার চেষ্টা করবো- এড. শরীফ
নেত্রী যেভাবে কমিটি সাজাবে সেভাবেই সাজবে- তৃণমূল নেতাকর্মী
সংবাদচর্চা রিপোর্ট
ঢেলে সাজাঁনো হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল তথা কেন্দ্রীয় সম্মেলনে পূর্বেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। সেই সূত্রে দরজায় কড়া নাড়ছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কাউন্সিলকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই নেতাকর্মীদের তোরজোড় শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, অতীতে সম্মেলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গড়িমসি করলেও এবার আর তেমন সুযোগ থাকছে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদ প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যেই লবিং শুরু করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জেলার মন্ত্রী ও সাংসদদের দ্বারে দ্বারে ওই পদ প্রত্যাশীরা ঘুরছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা কমিটি সাজানোর বিষয়ে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। যার ন্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান নওফেল নারায়ণগঞ্জে আসতে পারেন যেকোন সময়।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, এবার কাউন্সিলে অনেক প্রবীণ নেতৃত্ব পদবী থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তথা বয়স্ক কিংবা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় যারা দল পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছেন না কিংবা গাফলতি লক্ষ্য করা যায় এমন নেতাদেরকে এবার কমিটিতে আর দেখা যাবে না। সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকা আবদুল হাই যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এই কমিটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছেন তিনি এবারও কমিটিতে থাকবেন। তবে আগামী কাউন্সিলে প্রবীণ নেতৃত্ব না থাকার বিষয়টিতেই তৈরী হয়েছে জটলা। কমিটিতে আবদুল হাইয়ের থাকা না থাকার বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
বিষয়টি পরিষ্কার করতে দৈনিক সংবাদচর্চা থেকে মুঠোফোন করা হয় আবদুল হাইকে। তিনি বলেন, প্রথমে ওয়ার্ড এরপর ইউনিয়ন যথাক্রমে উপজেলা কমিটি। তারপরে হবে জেলা কমিটি। মূলত কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হবে। ইউনিয়ন করবে ওয়ার্ড কমিটি এবং উপজেলা করবে ইউনিয়ন কমিটি। তারপর হবে উপজেলা কমিটি যথাক্রমে জেলা কমিটি। জেলা কমিটির যদিও এখনো সময় হয়নি। এক বছর হয়েছে মাত্র পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। তবে জেলা কমিটির বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যেভাবে ভালো মনে করবেন সেভাবেই হবে।
সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদলকে (ভিপি বাদল) দেয়া হতে পারে জেলার দায়িত্ব। তার হাত ধরে আসতে পারে আগামী কমিটির নেতৃত্ব। অন্যদিকে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তারও এবার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ভিপি বাদল ও মেয়র আইভীকে মুঠোফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে ভালো বোঝেন কে কোন জায়গায় যোগ্য। কাকে কী দায়িত্ব দিলে সে তা কিভাবে পালন করবেন। সেক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তকেই সবার মেনে নিতে হবে এবং তার সিদ্ধান্তই অনড় থাকবে। নেত্রী যেভাবে কমিটি সাজাবে সেভাবেই কমিটি সাজবে। এসকল বিষয়গুলোতে কোন নেতাকর্মীদের চিন্তার কোন কারণ নেই। দায়িত্ব দেয়া হলেও দলের পাশে থাকতে হবে দায়িত্ব না পেলেও দলের পাশে থাকতে হবে। দলের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী কখনোই পিছপা হবে না।
সম্মেলনের মাধ্যেমেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন সিলেকশনের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর কমিটি করা হবে না। সম্মেলনের মাধ্যমেই কমিটি গঠন করা হবে। যারা দলের দুঃসময়ে ছিলেন ত্যাগী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরাই আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাবেন। তবে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় হলো এবার কমিটিতে তরুণদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। অন্যদিকে ভূমিদস্যুতা চাদাঁবাজিসহ কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ এবং বেফাস মন্তব্যসহ নানা অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদেরকে এবার কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে।
কমিটিতে এবার আসতে পারে নতুন মুখও। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু এবার কমিটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন। যিনি বিগত সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে আনিসুর রহমান দিপুকে মুঠোফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী। নেত্রী আমাকে যেখানে দিবে সেখানেই আমি কাজ করবো। দলকে সংগঠিত করা দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা নেত্রী যে কর্মসূচী প্রদান করে তা পালন করার মাধ্যমে দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবো। এর বাইরে আর কোন কথা থাকবে না। মূলকথা নেত্রী যাকে যেখানে দিবেন, যাকে যে দায়িত্ব দিবেন আমরা সেভাবেই তা পালন করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার অন্যতম দাবীদার অ্যাডভোকেট মো. শরীফ হোসেন। গত জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ পাওয়ার কথা থাকলেও এই ত্যাগী নেতা বঞ্চিত হন। তবে অভিযোগ রয়েছে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের একটি কুচক্রী মহল তার এই পদ বঞ্চিত হওয়ার কলকাঠি নেড়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে মো. শরীফকে মুঠোফোন করা হলে তিনি বলেন, গতবার একটি পদ পাওয়ার কথা থাকলেও আমি তা পায়নি। আমি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। আগামী কাউন্সিলে যদি কেন্দ্র থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে আমি জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও তা পালন করার চেষ্টা করবো।
২০১৭ সালে কেন্দ্র থেকে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের। ওই কমিটিতে আবদুল হাইকে সভাপতি ও ভিপি বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭৫ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সংরক্ষিত নারী সাংসদ হোসনে আর বাবলী সহ আরও অনেকে। জেলা আওয়ামী লীগে বিভিন্ন পদে থাকা নেতাকর্মীরা এবার নিজ থেকেই অবসর নিয়ে তরুণদের জায়গা করে দিতে পারেন।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, এবারের কমিটিতে চমকপদ কিছু দৃশ্য থাকতে পারে। কারণ কমিটি ঘোষণা করার পূর্বেই কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। যেমন এবারের কমিটিতে প্রবীণদের থাকার সুযোগ কম। এছাড়াও বিতর্কিতরা কমিটিতে জায়গা পাবেন না। আবার আসতে পারে নতুন মুখও। সবমিলিয়ে কাকে দেয়া হবে কিংবা কে বাদ পড়বেন এসকল বিষয় নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ইতিমধ্যেই ব্যপক আগ্রহ তৈরী হয়েছে।